Generic placeholder image

গান

আমি পল রবসন বা বব ডিলান নই যে বলব, গান আমার অস্ত্র। আমি রবীন্দ্রনাথ নই, যে বলব, গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি, তখন তারে চিনি। আমি শাহ আবদুল করিমও নই যে বলব, গানে বন্ধুরে ডাকি, গানে প্রেমের ছবি আঁকি। এ কথা তাঁরাই বলতে পারেন, যাঁদের ‘আমার গান‘ নামক ঐশ্বর্য আছে। ‘আমার গান’ মানে কারো নিজের সুর দেওয়া বা লেখা গানই শুধু নয়, অন্য কারো গানও হতে পারে। যেমন রবীন্দ্রনাথের গান দেবব্রত বিশ্বাসের জন্যে আমার গান বা সুচিত্রা মিত্র বা কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যে আমার গান হয়, যেমনভাবে করিমভাইয়ের গান ‘আমার গান‘ হয়ে ওঠে রুহি ঠাকুরের গলায় বা তানসেনের সৃষ্ট রাগ ‘আমার গান‘ হয়ে যায় পণ্ডিত যশরাজের কাছে। তেমন কোনও ঐশ্বর্য আমার নেই। আমি রবীন্দ্রনাথের গানকে অবলম্বন করেই বলতে পারি, আমার এ তার বাঁধা কাছের সুরে, ওই বাঁশি যে বাজে দূরে, গানের লীলার সেই কিনারে যোগ দিতে কি সবাই পারে? রবীন্দ্রনাথের গানের কাছে যখন যাই, তখন দেখি তার অতলান্তে ডুব দেবো তেমন ডুবুরী নই আমি। মাটির গভীর থেকে উঠে আসা লোকগানের দিকে যখন চোখ মেলি তখন দেখি তার দিগন্তবিস্তৃত আকাশ আমার কাছে অধরা উচ্চতায়। মনে হয়, মোর শকতি নাহি উড়িবার। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কাছে যখন হাঁটু গেড়ে বসি, তখন বুঝি আমি নিতান্তই নিরক্ষর। তবু গান আমাকে ছাড়ে না, আমিও গানেই মজে থাকি সারাক্ষণ। আনন্দে দুঃখে শোকে সন্তাপে হতাশায় উচ্ছাসে ক্ষুদ্রতায় উদারতায় বুকের মধ্যে উথলে ওঠে নানা গান। মাঝে মাঝে অস্ফুট স্বরে নিজের মনেই গাই, এরে ভিখারি সাজায়ে কী রঙ্গ তুমি করিলে!
   তবু, জীবনে যা কিছু পেয়েছি গভীর অনুভবে, সবই গানের অনুষঙ্গে। মনে পড়ে, উত্তরবঙ্গের রসিকবিলের শরৎ রাভার কথা। সেই অরণ্য-নিবাসে ডিসেম্বরের হাড়কাঁপানো শীতের রাতে শরতের গান, বন্ধু কাজল ভ্রমরারে কি কখনো ভুলতে পারি। ভুলতে পারি আমার বান্ধবী ইন্দ্রানীর চুঁচুড়ার বাড়িতে গঙ্গার ধারের ডুবন্ত সূর্যের আলোয় তার বাবার গলায় শোনা, রাত্রি এসে যেথায় মেশে বা আমার শেষ পারানির কড়ি শোনার সেই দিনটির কথা। শিলচরে পিঙ্কুর স্টুডিওতে এক সকালে মীর মান্নান নামে লোকগায়ক যাকে আমরা মামু বলতাম তার গলায় শোনা ‘কত ধনীর ভরা খাইল মারা না পাইয়া কূলকিনার‘ শোনার কথা মনে পড়ে। কি করে ভুলি, সিলেটে দিনরাত এক করে রুহিদার গান আর কথায় ভেসে যাওয়ার কথা। এই পাওয়া এবং এমনতর অসংখ্য পাওয়া, যার সবটা ঘিরেই গান, সেই অসীম ধনেই আমি ধনী। আর কী পেয়েছি কি পাই নি বা পাবো, তার হিসেব করতে সত্যিই ‘মন মোর নহে রাজি‘। দীর্ঘশ্বাস, আক্ষেপ, তাও ওই গানকে ঘিরেই। যদি গানের আরো গভীরে পাড়ি দিতে পারতাম! বুকের ভেতর যে গান গুমড়ে ওঠে, যে অশ্রুত বাঁশি হৃদয়গহনে বাজে, তাকে যদি গলায় আনতে পারতাম! এই-ই দুঃখ, এই-ই আক্ষেপ।
   তবুও শান্তি তবু আনন্দ, পৃথিবীর দিকে দিকে অসংখ্য সুর ভেসে উঠছে হাজার হাজার কন্ঠে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত। বিশ্বব্যাপী এই ধ্বনিবিশ্বে ডুব দিয়ে কেটে যেতে পারবে এই অকিঞ্চিৎকর নশ্বর জীবন।

হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান

আলাপচারিতায়

নির্বাচনী গান

কাঠের নৌকা

নানা জায়গায় ছড়িয়ে থাকা নানা গান